গেঁটে বাত বা গাউটের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

 ** গেঁটে বাত বা গাউটের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

গেঁটে বাত বা  গাউটের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা


গাউট বা গেঁটে বাত হলো এক ধরনের প্রদাহজনিত আর্থ্রাইটিস, যা মূলত রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের অতিরিক্ত পরিমাণ জমে যাওয়ার ফলে হয়। ইউরিক অ্যাসিড যখন স্ফটিক আকারে জোড়ায় জমা হয়, তখন তীব্র ব্যথা, ফোলা, লালচে ভাব এবং গরম অনুভূতি দেখা দেয়। সাধারণত পায়ের আঙুলের গাঁটে, বিশেষ করে বড় আঙুলে, গাউটের আক্রমণ বেশি হয়। তবে হাঁটু, কবজি, কনুই বা গোড়ালিতেও এটি দেখা দিতে পারে।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গাউটের মূল কারণকে লক্ষ্য করে কাজ করে—শুধু উপসর্গ কমানো নয়, বরং শরীরের ভিতরে ইউরিক অ্যাসিডের অস্বাভাবিক বিপাকক্রিয়াকে ঠিক করার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে আরাম দেয়। এটি ব্যক্তির সামগ্রিক শারীরিক গঠন, মানসিক অবস্থা, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা বিশ্লেষণ করে ওষুধ নির্বাচন করে, যা হোমিওপ্যাথির মূল নীতি -এর ওপর ভিত্তি করে।

** গাউটের সাধারণ কারণ ও লক্ষণ
গাউটের প্রধান কারণ হলো রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি। এটি ঘটে যখন শরীর অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড তৈরি করে বা কিডনি যথেষ্ট পরিমাণে তা নির্গত করতে পারে না। অতিরিক্ত মাংস, সি-ফুড, অ্যালকোহল, চিনিযুক্ত পানীয়, উচ্চ রক্তচাপ ও স্থূলতা গাউটের ঝুঁকি বাড়ায়।
গাউটের উপসর্গ হঠাৎ করেই দেখা দিতে পারে —
গাঁটে তীব্র ব্যথা, বিশেষ করে রাতে
আক্রান্ত স্থানে ফোলা, লালচে ভাব ও গরম অনুভব
গাঁটের নড়াচড়া সীমিত হয়ে যাওয়া
দীর্ঘস্থায়ী ক্ষেত্রে ‘টোফাই’ (uric acid crystals) জমা হয়ে গাঁট বিকৃত হয়ে যাওয়া

** গাউটের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
হোমিওপ্যাথিতে গাউটের চিকিৎসায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ ব্যবহৃত হয়, যা রোগীর ব্যক্তিগত উপসর্গ অনুযায়ী নির্বাচন করা হয়। কিছু জনপ্রিয় ওষুধ হলো—
Colchicum autumnale – এটি গাউটের সবচেয়ে কার্যকরী ওষুধগুলির একটি। পায়ের বড় আঙুলের গাঁটে অতিরিক্ত ব্যথা, ফোলা ও স্পর্শে তীব্র যন্ত্রণা থাকলে এটি ব্যবহার হয়। খাবারের গন্ধেই বমি বমি ভাব হয় — এটি এই ওষুধের বিশেষ লক্ষণ।
Ledum palustre – যদি গাউটের ব্যথা নিচ থেকে উপরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং ঠান্ডা প্রয়োগে আরাম মেলে, তবে এই ওষুধ কার্যকর।
Benzoicum acidum – যখন মূত্রে তীব্র গন্ধ থাকে ও ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা অনেক বেশি হয়, তখন এটি উপকারী।
Lithium carbonicum – যারা বারবার গাউটের আক্রমণে ভোগেন, তাদের জন্য এটি ভালো প্রতিরোধমূলক ওষুধ। এটি ইউরিক অ্যাসিডের বিপাকক্রিয়া স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে।
Guaiacum officinale – গাঁট শক্ত হয়ে গেলে ও ব্যথার সঙ্গে পেশি টান ধরার অনুভূতি থাকলে এটি প্রয়োগ করা হয়।

** জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাস
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার পাশাপাশি জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন অপরিহার্য। যেমন —
মাংস, লাল মাংস, অ্যালকোহল ও চিনিযুক্ত পানীয় পরিহার করা।
পর্যাপ্ত জল পান করে শরীর থেকে ইউরিক অ্যাসিড বের করে দেওয়া।
তাজা ফল, শাকসবজি ও হালকা শস্যযুক্ত খাদ্য গ্রহণ।
নিয়মিত হাঁটা ও হালকা ব্যায়াম।

** উপসংহার
গাউটের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা কেবল ব্যথা উপশমেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি শরীরের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য ফিরিয়ে এনে রোগের পুনরাবৃত্তি রোধ করে। যথাযথ ওষুধ নির্বাচন ও অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিলে গাউট সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।